বাংলাদেশে থাকা কালীন মুকাভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও উদ্ভাবনের সাথে জড়িত ছিলেন। ৮০দশকে তিনি প্রথম শ্রেণীর আবৃত্তিকার হিসাবে খ্যাতিমান ছিলেন। মঞ্চে নাট্যচক্রের শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মৃত্তিকা বিজ্ঞান ক্লাব গঠন করেছিলেন এবং সয়েল পেইন্ট উদ্ভাবন করেছিলেন যা জাতীয় বিজ্ঞান ফেষ্টিবলে প্রথম হয়েছিল।
আমেরিকায় উচ্চতর প্রশিক্ষনের পর থেকে মশহুরুল হুদা এঞ্জেলেসে বসবাস করছেন ।
মশহুরুল হুদা যেখানেই যান না কেন অথবা থাকেন না কেন সেখানেই তিনি বিশেষ করে নিজেস্ব শিল্প কর্মের মধ্যেই নিয়োজিত থেকেছেন এবং দেশ ও জাতির জন্য কমিউনিটির মাধ্যমেই কমিউনিটির জন্য এবং মূলধারায় জাতীয় সংস্কৃতিকে সুপরিচিত করার প্রচেষ্টা করেছেন।
১৯৮৫ সনের দিকে সাইফুল রহমান জিতু ও হুদা উত্তর আমেরিকায় প্রথম একুশের প্রথম প্রহরে হলিউডের উপর দিয়েই ভ্রামমান অস্থায়ী শহীদ মিনার প্রদর্শন করে একুশ উদযাপন করেছিলেন । পরবর্তী সময়ে মশহুরুল হুদা লস এঞ্জেলেসে কমিউনিটির মাঝে নিয়মিতভাবে প্রথম প্রহরে একুশ উদযাপন চালু করেন । নব্বই দশকে হুদা নতুন প্রজন্মের জন্য বাংলা পাঠশালা চালু করে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তথা গান ও নৃত্য শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করান।
হুদা রাইটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ক্যালিফোর্নিয়ার সভাপতি। তিনি অসংখ্য কবিতা পাঠের আসর করেছেন এবং প্রথম উত্তর আমেরিকা কবিতা সম্মেলনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মময় জীবনে তিন যুগেরও অধিকাল ধরে কমিউনিটিতে সাংবাদিকতা করছেন। প্রবাস বাংলা ও মাইম ওয়ার্ল্ড নিউজ নামে তার নিজেস্ব অনলাইন সংবাদপত্র রয়েছে । একুশ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, একাধিক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। লিটল বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব লস এন্জেলেস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
কাজী মশহুরুল হুদা কমিউনিটির স্বার্থে সিটি অব লস এঞ্জেলেসের রামপাট ভিলেজ নেবারহুড কাউন্সিলের নির্বাচিত বোর্ড মেম্বার। মূলধারার সাথে কমিউনিটির মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। উল্লেখ্য, তিনি বাংলাদেশ আমেরিকান ডেমক্রেটিকস্ অব ক্যালিফোর্নিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট।
লিটল বাংলাদেশ ফরমেশনে তিনি অন্যতম একজন কো অডিনেটর ছিলেন এবং লিটল বাংলাদেশ বিউটিফিকেশন প্রজেক্ট এর আহবায়ক।
বাংলাদেশ ইউনিটি ফেডারেশন অব লস এঞ্জেলেসের এককালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাজী হুদা। ব্যাক্তিগত জীবনে চার সন্তানের জনক এই মাইম আইকন। যাদের প্রত্যেকেই আমেরিকায় বসবাস করছেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৩ সালে হিপনোথেরাপির উপর গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
ছোটবেলা থেকেই কাজী মশহুরুল হুদা, শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।
১৯৭৫ সালে আমেরিকান মুকাভিনেতা এডাম দারিউসের মূকাভিনয় কাজী হুদাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয় এবং অনুপ্রানিত করে। এরপর সম্পূর্ণ নিজেস্ব প্রচেষ্টায় মূকাভিনয় জগতে প্রবেশ করেন তিনি। বাংলাদেশে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে মূকাভিনয়কে সুপরিচিত করে তোলেন। টিভি ও মঞ্চের পারফর্মেন্সের মাধ্যমে তিনি নিজেকে দর্শকদের কাছে নিয়ে যান খুবই অল্প সময়ের মধ্যে।
বাংলাদেশের প্রথম ড্রামা স্কুল (নাট্যচক্র ড্রামা স্কুল) থেকে প্রথম ড্রামা সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে প্রথম ড্রামা ওয়ার্কশপ করেন। এভাবেই অতি অল্পসময়ে হুদা বাংলাদেশের মূকাভিনয় জগতে প্রচার ও প্রসার লাভ করেন।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে হুদা ১৯৮৬ সালে ভ্যানকুভারের ওয়াল্ড এক্সপোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাইম এন্ড মুভমেন্ট ফেস্টিভলে মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করার মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল ব্যক্তিতে পরিনত হন।
হুদা লস এঙ্গেলেসে ১৯৮৫ সালে নিউ এজ মাইম থিয়েটার গঠনের মাধ্যমে নতুন ধারায় মূকাভিনয় চর্চা শুরু করেন এবং নতুন যুগের মূকাভিনয় সৃষ্টিতে নিজেকে নিয়জিত করেন। পাশাপাশি অনুন্নত দেশের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্ট্রিট মাইমের সাথে ইমপ্রভায়জেশনের সংযোজন ঘটিয়ে গ্রামীন মূকাভিনয় নির্মাণ করেন।
মাইম আইকন হুদা শুধু মূকাভিনয় জগতেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইয়োগা টেকনিক ডেভলপার, হলিউডে হুদা ইয়োগা নামে নিজেস্ব ইয়োগা স্টাইলের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইয়োগা সায়েন্স নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে নিজস্ব টেকনিক উত্তোরণে দৈহিক এলাইনমেন্ট ও পেইনম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া ডেভলপ করেছেন।
প্রবাসের সামাজিক ও কমিউনিটিতে রয়েছে তার দেশাত্মবোধের কর্ম তৎপরতা।
কাজী মশহুরুল হুদা দীর্ঘকাল যাবৎ লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। ইতিমধ্যে তার একটি কাব্য গ্রন্থ ‘ ও দুটি প্রবন্ধ সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে।
দেশে বিদেশে অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন এই গুনি শিল্পী। লোটাস ফেস্টিবল, ফোবানা, বাফলা, আনন্দমেলা কমিটি কতৃক বিশেষ সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ হুদা মাইম ক্লাব কর্তৃক তিনি বিশেষ উপাধি ‘মাইম আইকন’ লাভ করেন।
সহজ সরল সাদা মনের এ শিল্পের কারিগর নিজেকে উৎসর্গ করেছেন দেশিয় সংস্কৃতির কাছে। প্রবাসের সঙ্গে দেশের সেতু বন্ধন রচনায় কাজ করে যাচ্ছেন আজন্মকাল থেকে। স্বপ্ন দেখেন সুন্দর আগামীর। জাতীয়তা বোধ, দেশপ্রেম, স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে বিশ্বের বুকে উড়াতে চান শান্তির পতাকা।
জাতি স্বত্বার মূকাভিনেতা ও মাইম আইকন কাজী মশরুল হুদা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মূকাভিনয়ের অন্যতম একজন পথিকৃৎ। বিশ্বে ইন্টারন্যাশনাল মাইম এ্যম্বাসেডর অব বাংলাদেশ হিসাবে সুপরিচিত। মাইম গবেষক, বডি এলাইনমেন্ট ও মাইম থেরাপি ডেভলপার। মাইম শিল্পকে নিয়ে গতানুগতিকতার মাঝে নতুনত্বের ধারা নির্মাণের প্রচেষ্টা রয়েছে তার নতুন যুগের মূকাভিনয় চর্চায়। বাংলাদেশ একাডেমী অব লস এঞ্জেলেস মাইমের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে অনাররী ডক্টরেট প্রদান করে।
প্রবাস জীবনে তিনি শুরু থেকেই বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন । যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে “লিটল বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা রয়েছে । তিনি একা ধারে কবি লেখক সাংবাদিক ও সমাজকর্মী । লিটল বাংলাদেশ আমেরিকার বুকে মাইলস্টোন, নামক ডকুমেন্টারি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি লস এঞ্জেলেসে লিটিল বাংলাদেশ বিউটিফিকেশন প্রজেক্ট এর মাধ্যমে একাধিক মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল স্থাপন করে সকলের প্রশংশা অর্জন করেন ।
বর্তমানে বাঙালী জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে মূকাভিনয়ে বাংলাদেশী স্বত্বার স্বরূপ নির্মাণের জন্য বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।