দেশব্যাপী শুদ্ধ ও দেশজ রীতির মূকাভিনয় চর্চার প্রসারের লক্ষ্যে ২৯ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী সিলেটের সম্মিলিত নাট্য পরিষদের মহড়া কক্ষে মূকাভিনয় কর্মশালার আয়োজন করেছে বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্র। সম্প্রতি গঠিত বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্র ইতিমধ্যে মূকাভিনয়কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে পাঁচ দিনব্যাপী সফলভাবে কর্মশালা সম্পন্ন করেছে।

বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের ও জাতিসত্তার মূকাভিনয়শিল্পী, মাইম আইকন কাজী মশহুরুল হুদা এই সংগঠনের প্রধানতম উদ্যোক্তা। তাঁর যোগ্য সাহচর্য হিসেবে আছেন নবধারার মূকাভিনয়শিল্পী রিজোয়ান রাজন। তারা উভয়ে মনে করেন বাংলাদেশের মূকাভিনয় বাংলার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতায় বিশ্বে নব সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। গ্রামবাংলার ঋদ্ধ সংস্কৃতিই তাঁদের মূকাভিনয়ের উপাদান এবং এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। সিলেটের কর্মশালার মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরে বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম প্রচেষ্টা। এই কর্মশালার কোর্স পরিচালক কাজী মশহুরুল হুদা, প্রধান প্রশিক্ষক রিজোয়ান রাজন এবং মূকাভিনয়ের নন্দন ভাবনা ও গল্প নির্মাণ প্রশিক্ষক কবি শাহেদ কায়েস, ভাব-রস ও তাল-লয়-ছন্দ প্রশিক্ষক নৃত্যশিল্পী মুক্তা ঠাকুর এই আয়োজনটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই কর্মশালায় সার্বিক সহযোগিতা করছে সিলেট প্যান্টোমাইম এবং সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন ধ্রুব জ্যোতি দে।
কর্মশালা পরিচালক কাজী মশহুরুল হুদা প্রবাসে থেকেও দেশের মূকাভিনয়শিল্পের প্রসারে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে মূকাভিনয়ের স্বরূপ নির্মাণে এক অন্তহীন যাত্রা শুরু করেছেন। তিনি এই লক্ষ্যে বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে নানা কর্মসূচি সংগঠিত করছেন।

মূকাভিনয়শিল্পী রিজোয়ান রাজন বলেন, ‘বাঙলা মূকাভিনয় গবেষণা কেন্দ্রের এই কর্মশালাটিতে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। মূকাভিনয় একটি জনপ্রিয় শিল্প হলেও এর চর্চাকারীর সংখ্যা একেবারেই কম। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বে একই অবস্থা। তবে সিলেটের এই আগ্রহীদের যদি পরিচর্যা এবং পৃষ্ঠপোষকতা করা যায়, তবে এখান থেকেই আমরা আগামীতে ভালো মানের শিল্পী পাব।’

ধ্রুব জ্যোতি দে বলেন, ‘সিলেটে এই কৰ্মশালা আয়োজনের পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হচ্ছেন মূকাভিনয়শিল্পী রিজোয়ান রাজন। রাজন ভাইকে ধন্যবাদ জানাই। প্রত্যেকটি শিল্পের রয়েছে নিজস্ব ভাষা। আমরা যখন কোনো শিল্পের ভাষা অন্তঃকরণ করতে পারি, তখনই শুধু সেই শিল্পের পরিপূর্ণ আস্বাদ লাভ করতে পারি। মূকাভিনয়ের ভাষা হচ্ছে সর্বজনীন ও শাশ্বত। মূকাভিনয়শিল্প বোঝার জন্য দর্শকের মধ্যে কোনো শ্রেণীকরণ প্রয়োজন হয় না। পরিশেষে আমি ধন্যবাদ জানাই যারা এই কর্মশালার আয়োজক ও প্রশিক্ষক যারা ছিলেন তাদের সবাইকে।’